সামনেই ডুরান্ড ডার্বি , চির প্রতিদ্বন্ধী সবুজ মেরুন আর লাল হলুদের লড়াই। এই লড়াইতে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকে না, কি হবে এবারের ১২ অগাস্ট সন্ধ্যেয় তার সাক্ষী থাকতে চলছে আপামর ভারতবাসী। আসুন আজ জেনে নি এই ডুরান্ড এর কিছু খুঁটিনাটি।
শনিবার ডুরান্ডের ডার্বির আগেই চড়ল পারদ। নিউ সেক্রেটিয়েট বিল্ডিংয়ে ডুরান্ড কমিটি ও দুই প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী। ডুরান্ড কমিটির টিকিট বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট দুই প্রধানই। ক্ষোভে মাঝপথেই মিটিং ওয়াক আউট ইস্টবেঙ্গলের। টিকিট বণ্টনে অখুশি হলেও শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ছিল মোহনবাগান।
গত বছরও ডুরান্ড কমিটির টিকিট বণ্টনের সিদ্ধান্ত ঘিরে আসন্তোষ দেখা দিয়েছিল দুই প্রধানের মধ্যে। শনিবার মরসুমের প্রথম বড় ম্যাচ। ইতিমধ্যেই সেই ডার্বি ঘিরে পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছে। সমর্থকদের মধ্যেও ডার্বি ঘিরে তুমুল উৎসাহ। বড় ম্যাচের টিকিট নিয়ে এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তিও জারি করেনি ডুরান্ড কমিটি। তবে সেনাবাহিনীর আচরণে রীতিমতো বিরক্ত দুই প্রধান। মোহনবাগান বৈঠকে শেষ পর্যন্ত থাকলেও, মাঝপথেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সাফ হুঙ্কার, ‘সদস্যদের টিকিট না পেলে আমরা কেউ মাঠে যাব না।
গত বছর ৪ হাজার কমপ্লিমেন্টারি টিকিট দিয়েছিল। এ বারও সেই পরিমাণ টিকিটই দেবে বলেছে। এতেই আমাদের আপত্তি। আমরা ৬ হাজার টিকিট চেয়েছিলাম।’ এরই সঙ্গে যোগ করে ইস্টবেঙ্গল কর্তা বলেন, ‘আমরা কিছু প্রাইস টিকিটও চেয়েছিলাম।
কিন্তু সেই টিকিট অবিক্রিত থাকলে, ২৪ ঘণ্টা আগে তা ডুরান্ড কমিটিকে ফেরত নেওয়ার কথা জানাই। কিন্তু ওদের দাবি, আগে থেকে পুরো টাকা দিয়েই সেই টিকিট কিনে নিতে হবে। অবিক্রিত টিকিটের দায়িত্ব কেন আমরা নিতে যাব? সদস্যরা টিকিট না পেলে আমরা কেউ মাঠে যাব না।’ চাপের মুখে অবশেষে দুই ক্লাবকে ৫ হাজার করে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত ডুরান্ড কমিটির। আইএফএ-কে ৫০০ কমপ্লিমেন্টারি টিকিট দেবে ডুরান্ড।
এছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনকে কিছু কমপ্লিমেন্টারি টিকিট দেবে। বাকি টিকিট বিক্রি করা হবে। অফলাইনেই ডার্বির টিকিট বিক্রি হবে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, অনলাইনে টিকিট কাটলেও দর্শকদের সেই টিকিট রিডিম করতে আসতে হয়। এতে সমস্যা আরও বাড়ে। তাই অফলাইনেই ডার্বির টিকিট বিক্রি করার কথা ডুরান্ডকে জানায় পুলিশ। বড় ম্যাচের ৬০ ঘণ্টা আগেই টিকিট বিক্রি শুরু হবে। টিকিটের ন্যুনতম দাম ১০০ টাকা।
বড় ম্যাচের জন্য ময়দানের দুই প্রধানের সমর্থকদের মধ্যে বাগযুদ্ধ, হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই শহরে চলে এলেন স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।
এ বার তিনি বাগান শিবিরে থাকছেন নতুন ভূমিকায়। দীর্ঘদিন আইএসএলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে হাবাসের। যা কাজে লাগবে সবুজ-মেরুন শিবিরের। তিনি প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলকে বেশ ভালো চেনেন। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে হাবাসের ধারণা রয়েছে। সঙ্গে সাফল্যও রয়েছে।
তিনি ২০১৪-১৬ মরসুমে আতলেটিকো কলকাতার কোচ ছিলেন। এরপর ২০১৬-১৭ মরসুমে তিনি পুনে সিটিতে ছিলেন। এরপর এটিকের কোচিং করান ২০১৯-২০। এরপর ২০২০-২১ মরসুমে তিনি এটিকে মোহনবাগানের কোচিং করিয়েছিলেন। তাঁরপরই মোহনবাগানের কোচ হন হুয়ান ফেরান্দো।
ফেরান্দো-হাবাস জুটি এ বার ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের কাছে নিঃসন্দেহে বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। যদিও কলকাতায় এসে লাল-হলুদের নতুন কোচ কুয়াদ্রাত জানিয়েছিলেন, ময়দানের বড় টিমের কোচিং করাতে গেলে সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। সামনেই এএফসি কাপ রয়েছে। ১৬ অগস্ট মোহনবাগানের ম্যাচ রয়েছে এএফসি কাপে। তাই হয়তো ডুরান্ডের ডার্বিতে মোহনবাগানের অনেক ফুটবলার খেলবেন না।
আরও ভালো করে বললে সবুজ-মেরুনের সেরা টিম হয়তো ডুরান্ডে নামাবেন না হুয়ান ফেরান্দো। তবে এই ম্যাচ মরসুমের টিউন সেট করে দেবে। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল ডুরান্ড ডার্বিতে জিততে পারলে এই মরসুমে এগিয়ে যাওয়ার একটা রসদ পেয়ে যাবে। এ বার দেখার হাবাসের সঙ্গে কেমন রণনীতি তৈরি করে ডার্বিতে দল নামান ফেরান্দো।
ডুরান্ড কাপের এই ম্যাচে জিততেই হবে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে। টানা আট ডার্বি হেরে বেশ চাপে ইস্টবেঙ্গল।অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া লিগে তোলপাড় ফেলেছিলেন কামিংস। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্সকে ট্রফি দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে এক মরসুমে মেরিনার্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার নজির গড়লেন। ছন্দে থেকেই সবুজ-মেরুনে যোগ দিয়েছেন কামিংস।
কাতার বিশ্বকাপ খেলা অস্ট্রেলিয়ার তারকা ফুটবলারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরাও। শেষ মরশুমে অস্ট্রেলিয়া ক্লাব ফুটবলে সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্সের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ২৭ গোল করেছেন কামিংস। নতুন মরশুম শুরুর আগে এরকম বিশ্বকাপারের দলে আসার খবরে অবশ্যই খুশি হবেন সবুজ মেরুন সমর্থকরা।
এবার দেখা যাক মাঠের লড়াইয়ে কে যেতে । জানতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে ১২ অগাস্ট সন্ধ্যে পর্যন্ত।