বিতর্ক এখন টলিউড পাড়ার আরেক নাম। শুধু টলিউড পাড়া কেনো, রোজকার জীবনের নানান বিষয়ে আজ বিতর্ক এক বিশেষ অবদান পালন করে । এরকমই একজন মানুষ আজ আমাদের আলোচনার মূল বিষয় যার ক্যারিয়ার শুরু হয় থিয়েটার এর মাধ্যমে । ছোটপর্দায় ২০১০ সালে সাত পাঁকে বান্ধা সিরিয়ালের মুখ্য চরিত্র রাজা হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ এর পরই দর্শক বা তার ভক্তবৃন্দের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৩ বছরের এই যুবককে দেখে ৮ থেকে ৮০ সবাই মুগ্ধ এবং তাঁর সিরিয়াল কোনোমতেই মিস করা যাবে না । সাত পাঁকে বাঁধা সেই সময় বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং রাজা আর দুষ্টুর জুটি বাংলার মা ঠাকুমার মুখে মুখেই ছড়িয়ে পড়ে। হ্যাঁ এতক্ষনে হয়তো বুঝতে পেরেছেন কার বিষয়ে কথা হচ্ছে?!! সেই ২০১০ এর ছোটপর্দার “সাত পাঁকে বাঁধা” থেকে শুরু করে ২০২৩ এর বড়পর্দার “শহরের উষ্ণতম দিনে” পর্যন্ত তাঁর যাত্রাপথ তাকে তার দর্শক তথা ভক্তবৃন্দের কাছের মানুষ করে তুলেছে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে তিনি মুম্বাই পাড়ি দেন । সেখানে এক থিয়েটার গ্রুপের সাথে তার অভিনয় যাত্রা শুরু।মুম্বাই এর কিশোর নামিত কাপুর এর অভিনয় প্রতিষ্ঠান থেকে তার অভিনয় শেখা।
সাত পাঁকে বাঁধা এর পর ২০১৩ সালে বাংলার বিগ বস, ২০১৪ সালে “India’s best Cinestars ki khoj” ছাড়াও নানান বাংলা চলচ্চিত্রে যেমন খোঁজ, এলার চার অধ্যায়, আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড , সাহেব বিবি গোলাম, তিন কন্যা, মেঘনাদবধ রহস্য প্রমুখ জনপ্রিয় চলচিত্রে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন ।
ছোট পর্দায় ইচ্ছেনদি (২০১৫–১৭) এবং ফাগুন বউ (২০১৮–১৯) তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে । ইচ্ছেনদী এর ডক্টর অনুরাগ ব্যানার্জী এবং ফাগুন বউ এর ডক্টর অয়নদীপ ঘোষ তথা রোদ্দুর হিসেবে তার অভিনয় তাকে তার ভক্তদের মনের মণিকোঠায় এক বিশেষ স্থান করে দেয়। যাকে বলে হার্টথ্রব, রোদ্দুর অর্থাৎ বিক্রম হয়ে ওঠেন মেয়েদের হার্টথ্রব।
২০১৭ সালে ক্যালকাটা টাইমস এর বিবৃতিতে বিক্রম টেলিল্যান্ডের “হটেস্ট ম্যান এবং সবচেয়ে কাঙ্খিত পুরুষদের মধ্যে পঞ্চম হিসেবে ঘোষিত হন।
অর্ক গাঙ্গুলির পরিচালনায় নির্মিত খোঁজ এবং অনিক দত্তর মেঘনাদ বধ রহস্য বক্স অফিসে যথেষ্ঠ সারা ফেলে দেয়।
৩৭ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি অভিনয় করেছেন অসংখ্য ওয়েবসেরিজ এ।
আলাপ মিত্রের পরিচালনায় তানসেনের তানপুরা পার্ট ১ , ২(২০২০) এবং রুদ্রপ্রতাপের অভিশাপ পার্ট ১ (২০২১) এবং পার্ট ২ (২০২২) বিক্রমের জনপ্রিয়তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
সদ্য প্রকাশিত শহরের উষ্ণতম দিনে চলচ্চিত্রে বিক্রম এবং সোলাঙ্কির জুটির এক মিষ্টি প্রেমের গল্পও দর্শকদের বেশ আকৃষ্ট করেছে।
তবে আপনাদের মনে হতেই পারে যে যার জীবনে এত সাফল্য তার হয়তো প্রথম থেকেই জীবন চলেছে মসৃণ পথে। তা কিন্তু একেবারেই না। ২০১৭ সালের ৭ই জুলাই কলকাতার আলিপুর কোর্টে তাকে তার বান্ধবী সনিকা চৌহান এর মৃত্যুর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
২০১৭ এর এপ্রিল মাসের রাতে বিক্রম তার বান্ধবী সনিকা চৌহান এর সাথে গাড়ি করে ফিরছিলেন এবং রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এর কাছে একটি অ্যাকসিডেন্ট এ সনিকার সাথে সাথে মৃত্যু হয় এবং বিক্রম গুরুতর ভাবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন ।
সনিকা ছিলেন প্যাসেঞ্জার সিট এবং বিক্রম নিজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
এরপর একের পর এক ধারায় মামলা চলছে থাকে প্রায় এক মাস ধরে । বিক্রম কে গ্রেপ্তার করা হয় এবং খুনের জন্য ৩০৪ ধারা, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য ২৭৯ ধারা, নিজের এবং অন্যের জীবনের নিরাপত্তা ভঙ্গ করার জন্য ৩৩৮ ধারা এবং মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ১৮৫ ধারা ও আরো অনেক ধারায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সময় বিতর্কে শোনা যায় যে তিনি জেনে শুনে সেদিন তার গাড়ি ১২০ কিলোমিটার বেগে চালাচ্ছিলেন এবং তার এমন কিছুই আঘাত লাগেনি । সামান্য আহত হয়েই সেদিন নাকি তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন । যদিও এইসব কিছুই অস্বীকার করেন অভিনেতা। তিনি জানান তিনি সেদিন মদ্যপ ছিলেন না এবং গাড়ির গতিবেগ ও এমন কিছুই বেশি ছিল না । প্রিয় বান্ধবীর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত ছিলেন তিনি। সনিকার পরিবার এবং প্রিয় বান্ধবী এই সময় বিক্রম এর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন । এর ভিত্তিতে ৭ই জুলাই বিক্রমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ ই জুলাই অবশেষে তিনি মুক্তি পান এবং প্রায় তিন বছর ধরে কেস চলার পর ২০২০ সালে তিনি বেকসুর খালাস পান।
এত প্রতিকূলতার মধ্যেও যে মানুষটা জীবনে থেমে থাকেননি, সাফল্যের পূণ্য শিখরে পৌঁছানোর জন্য প্রতিদিন লড়ে চলেছেন , তার চলার পথ আরো মসৃণ হোক এই কামনা করি ।