ফোন ছাড়া দিনের মধ্যে এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। আর যাবেই বা কি করে? একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের জীবনের সাথে এই ফোন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা বিশ্বের খবর পাওয়া থেকে শুরু করে কোথায় কি ঘটেছে, কার বিয়ে বা জন্মদিন পালন, কোনো নতুন গান প্রচার বা কোনো চলচ্চিত্র অভিনেতার জীবনের কোনো খবর, কোনো সুন্দর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার বা কোনো নতুন পোশাকের বাজারে আবির্ভাব – এসবই আজ এই ছোট্ট যন্ত্রের মাধ্যমে সহজলভ্য। এখন আর নতুন বছরে মানুষ মানুষকে গ্রিটিংস কার্ড দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় না । একটা ছোট্ট হ্যাপি নিউ ইয়ার বা হ্যাপি বার্থডে বার্তা প্রেরণ সম্ভব এই ছোট্ট যন্ত্রের মাধ্যমে।
জীবন এখন অনেক সহজতর হয়ে উঠেছে ।কোনোকিছু জানার বা অদেখাকে দেখার ইচ্ছে হলেই মোবাইলে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজলেই হবে ।
টেকনোলজির উন্নতি মানুষের জীবনের এক চরম আশীর্বাদ। কিন্তু ডিজিটাল দেশে এই অত্যধিক মোবাইলের ব্যবহার যে শুধুই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তা কিন্তু নয়।
হয়তো যোগাযোগের মাধ্যম এখন অনেক সহজ।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মানুষের অত্যধিক মোবাইলের ব্যবহার এর প্রবণতা দিন দিন মানুষের নিজের বিপদ বাড়িয়েছে ।
রাতে কম করে ৬ ঘণ্টা ঘুম সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল এর আবিষ্কারের পর বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে শুতে যাওয়ার এক চরম প্রবণতা দেখা যায়।
কারণ রাতে চোখ বোজার আগের মুহুর্ত এবং সকালে চোখ খোলার ঠিক পরের মুহূর্তেই ফোন তাদের হাতে চাই।
অনেকেই হয়তো সচেতন নয় কিন্তু এই ফোন মাথার পাশে রেখে ঘুমোতে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জক । মোবাইলের বিরিকিত রশ্মি শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
স্মার্টফোন বা মোবাইল ফোনের থেকে বিকিরিত ক্ষতিকারক রশ্মি হৃদয়ের স্বাভাবিক ছন্দ প্রতিরোধ করে ।ফলে অনিদ্রা, ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন ইত্যাদির প্রকটতা বারে।
এছাড়াও, ফোন সাথে করে ঘুমোতে গেলে কমে যায় শারীরিক অনেক ক্রিয়া, গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের নিঃস্বরণ হয়ে যায় বন্ধ। বন্ধ হয়ে যায় শারীরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া।
ঠিক ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রযুক্তি বিশেষ করে মোবাইল ফোনের ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্ক এর ক্রিয়াশীলতা ব্যাহত করে কারণ মস্তিষ্ক শান্ত হওয়ার বা আরাম করার যথেষ্ঠ সময় পায় না । খুব সহজেই মানুষ নিজেকে ডুবিয়ে রাখে বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনলাইন গেমস এর মধ্যে, টুইটার এর কোনো মুখরোচক সংবাদ এর মধ্যে অথবা ইনস্টাগ্রামের কোনো নতুন বিজ্ঞপ্তিতে।
বিকিরিত রশ্মির মাত্রা
মোবাইল ফোনের থেকে বিকীরিত রশ্মির মাত্রা প্রায় ৯০০ mHz।
ফলস্বরূপ, দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে থাকার ফলে বিকিরীত রশ্মির ফলে মাথা ব্যথা, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি নানারকমের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়।
দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনে কল করা বা কথা বলার সময় মোবাইল থেকে একধরনের তাপ বিকিরণ হয় যা আমাদের মস্তিষ্কের কলাগুলিকে উত্তপ্ত করে।
যে পরিবর্তন গুলো আপনার আজ রাতের সুখনিদ্রা আনতে পারে
- আপনার মোবাইল ফোনটি আপনার শোবার ঘরের বাইরে রাখুন যাতে রাতে বারবার আপনি ঘুম ভেঙে ফোনের দিকে চোখ না পড়ে।
- একটি অ্যালার্ম ঘড়ি কিনুন এবং আপনার ফোনের অ্যালার্ম ব্যবহার বন্ধ করুন।
- ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত দেড় ঘণ্টা বা দুঘন্টা আগে থেকে মোবাইলের ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
মোবাইল ফোনটি দূরে রেখে শুলে হয়তো প্রথম প্রথম ঘুম আসবে না।ঘুমোতে নানা সমস্যা হবে। কিন্তু ধীরে ধীরে আপনি যে পরিবর্তন লক্ষ করবেন , তা আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
এই ব্যস্ততম দুনিয়াতে ভালো বা সুখনিদ্রার খুব দরকার একটি সুস্থ জীবনযাপন করার জন্য।
তাই আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে।