শনিবার বিকেলে ময়দান দেখেছিল সুনীল-সুব্রত যুগলবন্দি। রবিবাসরীয় মায়াবি সন্ধ্যায় একঝাঁক নক্ষত্র সমাবেশ গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে। সবুজ-মেরুন আলোর মালায় সুসজ্জিত মোহন বাগান তাঁবুতে পাশাপাশি বসে গৌতম সরকার ও ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য। খোশগল্পে মেতেছিলেন দুই প্রাক্তনী। তাঁবু থেকে মঞ্চের দিকে এগতেই সমর্থকদের ভালবাসার অত্যাচারে বাঁধা পড়লেন তাঁরা। মালা পরিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন এক দৃষ্টিহীন সমর্থক। হেসে উঠে বহু যুদ্ধের সতীর্থকে এগিয়ে দিলেন সুব্রত। বললেন, ‘আমি নই, আজ ওঁর দিন। ফুলের মালা গৌতমকেই পরিয়ে দিন।’ কয়েকশো অনুরাগীর গলায় ‘জয় মোহন বাগান’ স্লোগানে মুহূর্তে মুখরিত সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যা।
১৯৭৭ সালে ইস্ট বেঙ্গল থেকে মোহন বাগানে এসেছিলেন মিডফিল্ড জেনারেল গৌতম সরকার। ৮৩’তে তিনিই ছিলেন দলের অধিনায়ক। সাতের দশকের কলকাতা ফুটবলে চালু ক্যাচ লাইন ছিল-‘গৌতম যেখানে, ট্রফি সেখানে।’ নাছোড় মনোভাব, ঝাঁঝালো ট্যাকল আর নিখুঁত ডিসট্রিবিউশনে সমর্থকদের হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে কসমস ম্যাচে তাঁর অনবদ্য লড়াই দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন খোদ কিংবদন্তি পেলে। ম্যাচের পর মোহন বাগানের ১৪ নম্বর জার্সিধারীর পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট। ১৯৭৯ সালের শিল্ড ফাইনালে ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে অন্যতম সেরা গোলটা করেছিলেন বড় ম্যাচের বড় ফুটবলার। রত্ন সম্মান পেয়ে জানালেন, ‘আমি গর্বিত। এর আগে ইস্ট বেঙ্গলও আমাকে জীবনকৃতী সম্মানে সম্মানিত করেছে। জীবনের একটা বৃত্ত সত্যিই সম্পূর্ণ হল। পরিবারের সামনে সম্মান গ্রহণ করতে পেরে ভালো লাগছে। এমন দিনে বাবা আর মায়ের কথা খুবই মনে পড়ছে। মোহন বাগান রত্ন তাঁদের উৎসর্গ করতে চাই।’
পাশাপাশি জীবনকৃতী সম্মান তুলে দেওয়া হল প্রাক্তন ফুটবলার শঙ্কর ব্যানার্জির হাতে। ১৯৭৩ সালের বড় ম্যাচে সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক চোট পাওয়ার পর সেভাবে কামব্যাক করতে পারেননি তিনি। পরবর্তীতে কোচের ভূমিকায় তাঁকে পেয়েছে ময়দান। সম্মানিত হওয়ার পর ছোট্ট মন্তব্য, ‘জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।’ এছাড়াও, সেরা ফুটবল সংগঠক হিসেবে সম্মানিত হলেন ইউনাইটেড স্পোর্টস কর্তা নবাব ভট্টাচার্য। সেরা স্ট্রাইকার দিমিত্রি পেত্রাতোস এখনও শিবিরে যোগ দেননি। স্বভাবতই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন অজি ফুটবলার। সেরা প্রতিশ্রুতিবানের পুরস্কার তুলে দেওয়া হল এঙ্গসেন সিংয়ের হাতে। শিবদাস ভাদুড়ির নামাঙ্কৃত সেরা ফুটবলারের ট্রফি পেলেন গোলরক্ষক বিশাল কাইথ। এছাড়াও মঞ্চ আলোকিত করলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। গৌতম সরকারকে উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধিত করেন ক্রীড়ামন্ত্রী। একই সঙ্গে তাঁর প্রস্তাব, ‘১৯১১ সালের ঐতিহাসিক শিল্ড জয় নিয়ে আরও তথ্যচিত্র তৈরি হোক।’ নানাভাবে ময়দানের পাশে থাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান তিনি। সঙ্গীত পরিবেশন করেন লোপামুদ্রা মিত্র ও বাবুল সুপ্রিয়।